নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে।কনফারেন্সে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ ২০টির অধিক দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষকরা শতাধিক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
আজ শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ) সন্ধ্যায় নোবিপ্রবি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন কনফারেন্সের টেকনিক্যাল চেয়ার ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোঃ শামসুল আরেফিন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদসহ বিভিন্ন অনুষদসমূহের ডিন, ইনস্টিটিউটসমূহের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। কনফারেন্সের পাবলিসিটি চেয়ার হিসেবে রয়েছেন এমআইএস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুস সালাম।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবির উপাচার্য ও কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম বলেন, ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিসের ওপর আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। এ কনফারেন্সে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরেছেন, এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে, ফলে এই প্রযুক্তি নিয়ে এ ধরণের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। জাতির পিতা আমাদের এই দেশটি উপহার দিয়েছেন। আর জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ভবিষ্যতের উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাই আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নোবিপ্রবিতে এমন একটি সফল আয়োজনের জন্য যারা পরিশ্রম করেছেন তাঁদের সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।
সমাপনী অনুষ্ঠানে নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী সফলভাবে আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্স আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনের সাথ সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ‘মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই কনফারেন্সে মেশিন ইন্টেলিজেন্সের ওপর পৃথিবীর খ্যাতনামা গবেষকদের মৌলিক গবেষণাপত্র প্রেজেন্ট করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে স্কুপাস ইনডেক্স ‘স্প্রিঞ্জার’ জার্নালে প্রকাশিত হবে। এই ফিল্ডে যেসব এক্সপার্টরা কাজ করছেন তাদের গবেষণা ক্ষেত্রে এ কনফারেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে’।
কনফারেন্সের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিসের ওপর আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে নোবিপ্রবি অবদান রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সের আয়োজন। এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এজন্যই আমরা এ ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করেছি।’
এ বিষয়ে কনফারেন্সের সংগঠক ও আইআইটির সহকারী অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম ইফাত বলেন, ‘মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সে ২৭২টি পেপার পড়া হয়েছে। এর মাঝে গৃহীত হয়েছে ১১৪টি গবেষণা প্রবন্ধ। এখানে চূড়ান্তভাবে মৌলিক গবেষণাপত্র পেজেন্ট করেছেন ১০৫ জন গবেষক। ২৭২টি পেপার ব্লাইন্ড রিভিউ করেছেন প্রায় ৬০০ জন রিভিউয়ার।’
কনফারেন্সের সংগঠক ও এমআইএস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার সেতু এ বিষয়ে বলেন, ‘নোবিপ্রবিতে প্রথমবারের মত এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সফল আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আমাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং নিত্যদিনের সামগ্রীর ওপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং সহযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। সেই লক্ষ্যেই ‘মেশিন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সের আয়োজন।’
উল্লেখ্য, দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এ কনফারেন্স নোবিপ্রবির পাঁচটি বিভাগ এবং ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) যৌথভাবে আয়োজন করেছে। বিভাগগুলো হলো ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসটিই) বিভাগ, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগ এবং পরিসংখ্যান বিভাগ। কনফারেন্সে দেশ এবং বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা তাদের কি-নোট বক্তব্য এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রেজেন্টেশন সেশনগুলোতে সেশন চেয়ার হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপক ও গবেষকগণ। অনুষ্ঠানের ইভেন্টগুলোর মধ্যে ছিল, টিউটোরিয়ালস, ওয়ার্কশপস, প্যানেলস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেশন ও প্রজেক্ট শোকাস্টিং। কনফারেন্সে টেকনিক্যাল ট্র্যাকস হিসেবে ছিল মেশিন লার্নিং অ্যান্ড কগনিটিভ কম্পিউটিং, ইনফরশেন সিস্টেমস, সেনসিং অ্যান্ড সিকিউরিটি, ইমেজিং, অ্যানালিটিকস অ্যান্ড কম্পিউটিং। কনফারেন্সের পাবলিকেশন পার্টনার স্প্রিঞ্জার এবং টেইলার্স অ্যান্ড ফ্রান্সিস।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।